চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওয়ার্ড সদস্য ও চেয়ারম্যান দ্বন্দ্বে ৪ মাস যাবৎ ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ





চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ৪ মাস যাবৎ ১৩০টি ভিজিডি কার্ডের সরকারি বরাদ্ধের চাল না দেয়া, স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানীর সুবিচার প্রার্থনা করে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের নিকট গত ২১ এপ্রিল ও পরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন ৪নং বারঘরিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা আব্দুস সামাদসহ ২২৫ জন নাগরিক। গত ১০ ফেব্রুয়ারী’১৯ রোববার অভিযোগটি করা হয়। এর আগে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশন বরাবরও অভিযোগ দেয়া হয় চেয়ারম্যান আবুল খায়েরের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগে ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আল-আমিন ১৩ জানুয়ারি ইউএনও বরাবর সবকিছু জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও পরিষদের বাক্কার চৌকিদার, রমিজ চৌকিদার, আহাদ দফাদার নানা রকমভাবে হুমকি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে।
৪ মাস যাবৎ ভিজিডি কার্ডের সরকারি বরাদ্ধের চাল না দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলাকার মানুষ ও ওয়ার্ড সদস্য আল আমিন জানান, ভিজিডি চালের জন্য ১৩০ টি কার্ড প্রকাশ্যে বাছাই এর মাধ্যমে প্রকৃত অনাহার গরিব মানুষদের না দিয়ে চেয়ারম্যান তাঁর পছন্দমত ব্যক্তিদের কার্ড দিচ্ছে। ১৩০টি কার্ডের বিপরীতে এখন পর্যন্ত একটিও কার্ড, কার্ডধারীদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। ফলে ৪ মাস যাবৎ ভিজিডির চালও ইউনিয়ন পরিষদে বিতরণ করা হয়নি। সরকারের কড়া নির্দেশ আছে প্রতি মাসেই যেন ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু বারঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪ মাস এ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ আছে।
এ ছাড়াও ২নং ওয়ার্ডে বিগত দশ মাস যাবৎ কোন সরকারি বরাদ্ধ দেয়া হয়নি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে। এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আল-আমিন জানান, ষড়যন্ত্র করে আমাকে পরিষদে অনুপস্থিত দেখিয়ে আমার সদস্যপদ বাতিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাকে কোন নোটিসও দেয়া হয় না কোন বিষয়ে। যা নিয়মের বহির্ভূত। আমিসহ ওয়ার্ডের সকলে প্রশাসনের কাছে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর অনুরোধ রাখছি।
মো. আল-আমিন ও আব্দুস সামাদ স্বাক্ষরীত অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ বারঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়েরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী বরাবর কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৫ অক্টোবর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলমগীর হোসেন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে আসেন। এসময় চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে অভিযোগকারীদের ঢুকতে দেননি গ্রাম পুলিশ আবু বাক্কার। ইউএনও ও চেয়ারম্যান অফিস কক্ষে আলাপের পর ইউএনও আলমগীর হোসেন বের হন। এবং অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে ‘ঠিক মত চলেন, আমি পূণরায় আসব’ বলেই গাড়ীতে উঠে চলে যান।
এখানেয় শেষ নয় অভিযোগ পত্র থেকে আরো জানা যায়, ট্যাক্সের টাকায় স্ট্রীট লাইট জলবে, ফ্রি নম্বর প্লেট দেয়া হবে বলা হলেও এখন সেটার জন্য ১০০ টাকা হারে ৯টি ওয়ার্ড থেকে ৯-১০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন ৪ নং বারঘরিয়া ইউনিয়নের বঞ্চিত, ভূক্তভোগী জনগণের পক্ষে আব্দুস সামাদসহ ২২৫ জন নাগরিক। 
১০০ টাকা চার্জ এর বিনিময়ে বাড়ীতে হোল্ডিং নম্বর প্লেট বসার অনুমতি কে দিয়েছে জানতে চাইলে চেযারম্যান আবুল খায়ের জানান, কাউন্সিলের মালিক ইউএনও সাহেবের নির্দেশ এবং ক্ষমতাবলে এ টাকা আদায় করছি।
এ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. আল আমিন পুনরায় ১০০ টাকা না দেবার জন্য নাগরিকদের জানালে আল আমিনকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় কাজ, প্রকল্প হস্তগত এবং অবৈধ সুবিধাভোগী ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য শরিফুল ইসলাম, ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য সেমাজুল ইসলাম হারেজ, ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য রঞ্জু খাঁন ও ইউপি সচিব জহিরুল ইসলামের সমন্বয়ে সম্পন্ন করছেন। সচিব জহিরুল বলেন, ২-৩ জন মেম্বার না থাকলে কি যায় আসে।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, গরীব সাধারণ মানুষদের আর্থিক সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রীর ভিজিএফ ও ভিজিডি কার্ড, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড, সেলাই মেশিন ইত্যাদি কোন কার্ডই চেয়ারম্যান খায়ের টাকা ছাড়া প্রদান করেন না। কার্ড গ্রহিতাগণের নিকট অবৈধ টাকা নিলেও এ মর্মে হুমকি দেন যে, টাকা নেবার কথা কাউকে বললেই ইউএনও সাহেবকে দিয়ে কার্ড বাতিল করিয়ে দেব। ইউএনও সাহেব আমাদেরি লোক, তিনি আমাদের সাথেই আছেন এবং তিনি সাথে থাকলে আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না।
অভিযোগ থেকে আরো জানা যায়, এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারী ইউএনও আলমগীর হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মুখলেশুর রহমান ও চেয়ারম্যান আবুল খায়েরসহ তাঁর হস্তগত সদস্যবৃন্দ, সচিবসহ বেতবাড়িয়াতে দিনভর পিকনিক করেন। পিকনিক থেকে ফিরে চেয়ারম্যান আবুল খায়ের চিৎকার করে বলেন, ইউএনও সারের সাথে পিকনিক করে এলাম। ফলে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে লাভ নাই। অভিযোগ পত্রে ইউএনও আলমগীর হোসেনের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আবুল খায়ের চেয়ারম্যান অবৈধ ফায়দা লুটছেন।
অভিযোগ পত্রে আরো বলা হয়, ৫ নং ওয়ার্ডের এক মেয়ের সাথে নয়ালাভাঙ্গার এক ছেলের অবৈধ শারীরিক মেলামেশাকে কেন্দ্র করে শালিসের ব্যবস্থা করা হয়। সে শালিসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা তাদের না দিয়ে চেয়ারম্যান আত্মসাৎ করেন। অপর আরেক অভিযোগে, বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত এক পরিবারের ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সেটাও উল্লেখ্য রয়েছে অভিযোগপত্রে। এছাড়াও চেয়ারম্যানের নামে গাঁজার মামলা চলমান আছে। হোটেলে খেয়ে বিল না দিয়ে সে হোটেল বন্ধ করেছে হুমকি-ধামকি দিয়েছে উল্লেখ করেন।
বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের’র কাছে, ৪ মাস থেকে হতদরিদ্রদের মাঝে ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ কেন? ও অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে, এত কথা বলা সম্ভব না বলে কোনো সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের নিকট জানতে চাইলে বলেন, অন্য বিষয়ে শুনেছি, তবে ৪ মাস থেকে ভিজিডি চাল দেয়নি তা আমি অবগত না। তাছাড়া কেও অভিযোগও করেনি। তারপরেও তথ্য সঠিক হলে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
নানা অভিযোগ এখন চেয়ারম্যান আবুল খায়ের এবং সচিব ও কয়েকজন ওয়ার্ড সদস্যদের বিরুদ্ধে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষ সঠিক পদক্ষেপ নেবেন এটাই এখন প্রত্যাশা সচেতন ইউনিয়নবাসীর।

Comments

Popular posts from this blog