শিশু তুহিন হত্যায় স্বজনরাই জড়িত 

প্রকাশিত : ১৪/১০/২০১৯, সময় : ১১:৩০পি,এম




শিশু তুহিন হত্যা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন পুলিশ প্রশাসনের


চাঞ্চল্যকর শিশু তুহিন হত্যা মামলার জট খুলতে শুরু করেছে। বেরিয়ে আসছে মুল রহস্য। পুলিশের ধারণা দীর্ঘ দিনের গ্রাম্য বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য নৃশংস ভাবে শিশু তুহিনকে পৈচাশিক উপায়ে নির্মম ভাবে খুন করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় শিশুর বাবাসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া কেজাউড়া গ্রাম থেকে শিশু তুহিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তুহিন রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া কেজাউড়া গ্রামের আবদুল বছির মিয়ার ছেলে।

পুলিশ জানায়, হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির কান, গলা ও লিঙ্গ কেটে পাশবিক কায়দায় হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুঁলিয়ে রাখে। শিশুটির পেটে বিদ্ধ ছিল দুটি ধারালো ছুরি। শিশুর মরদেহে বিদ্ধ দুটির ছুরিতে সোলেমান ও সালাতুলের নাম লেখা রয়েছে। এ নাম দুটি নিয়ে শিশু হত্যার রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, অনেক ক্লু আমাদের হাতে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবা-চাচা, চাচিসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, ডিআইও ওয়ান সুনামগঞ্জ আনোয়ার হোসেন মৃধা, ডিবির ওসি মুক্তাদির আহমদসহ সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সদস্যরা।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার কিছু ক্লু আমাদের হাতে এসেছে, তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবা বাছির, চাচা আবদুল মোচাব্বির, জমশেদ, নাছির ও জাকিরুলসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আসামিদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দিরাইয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে পারিবারিকভাবে নৃশংস ও ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিশু তুহিন।

কেন তাকে মারা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন তাকে মারা হয়েছে, কিভাবে মারা হয়েছে, কতজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে সবই আমরা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই সবকিছু বলতে চাচ্ছি না। আটককৃত স্বজনদের মধ্যে ৩-৪ জনের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

তিনি জানান, গ্রামের দীর্ঘদিনের বিরোধ ও একাধিক মামলায় প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নিহত শিশুর দেহে বিদ্ধ ছুরির হাতলে লেখা সোলেমান ও সালাতুলের নাম রয়েছে। তারা অন্য মামলার আসামি। তাদেরকে ফাসাঁনোর জন্য তাদের নাম লেখা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া নিহত তুহিনের বাবাও একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আছেন।

স্বজনরা জানান, রবিবার রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে শিশু তুহিন প্রকৃতির ডাকে উঠলে তার মা বাহিরে নিয়ে যান। এরপর তাকে এনে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেন। রাত ৩টার দিকে শিশুর মা-বাবা হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখেন তুহিন ঘরে নেই। এরপর পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা বাড়ির পাশে রক্ত দেখতে পান। এরপর কিছু দূরে সুফিয়ান মোল্লার উঠানে মসজিদের পাশে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান তারা।

নিহত শিশুর বাবা আবদুল বছির মিয়া জানান, গ্রাম্য বিরোধ থাকলেও আমার এই ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমি তা বিশ্বাস করি না।

স্থানীয়রা জানায়, ৪ বছর আগে গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী নিলুফা হত্যার ঘটনায় কেজাউরা গ্রাম দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষে এলাছ মিয়া ও নিহত শিশুর বাবা আবদুল বছির গং এবং অন্য পক্ষে আনোয়ার মেম্বার গং। সোমবার নিলুফা হত্যা মামলা আপোষ মিমংসার জন্য নির্ধারিত তারিখ ছিল। কিন্তু নিহত শিশুর বাবা বছির মিয়া আপোষের পক্ষে থাকলেও এলাছ মিয়াসহ অন্যদের আপোষ মিমাংসায় দ্বিমত ছিল বলে জানা যায়। শিশু তুহিন হত্যাকান্ডটি মুলতঃ একারনেও ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Comments

Popular posts from this blog